শৌনকের আশ্রমে সৌতি - আদিপর্ব/মহাভারত Shounoker ashrume soutee - adiporbo mohabharat

এই পর্ব থেকে আমরা যা যা জানতে পারবো তা হলো মহাভারতের ইতিহাস কে লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং কেন লিপিবদ্ধ করেছিলেন।


শৌনকের আশ্রমে সৌতি - আদিপর্ব/মহাভারত

শৌনকের আশ্রমে সৌতি - আদিপর্ব/মহাভারত

কুলপতি মহর্ষি শৌনক দ্বাদশ বার্ষিক যজ্ঞ করছিলেন। একদিন লোমহর্ষণের পুত্র পুরানকথক সৌতি সেখানে বিনীতভাবে উপস্থিত হলেন। আশ্রমের মুনিরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, সৌতি তুমি এখন কোথা থেকে আসছো। এতকাল কোথায় ছিলে? সৌতি উত্তর দিলেন, আমি রাজর্ষি জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে ছিলাম, সেখানে কৃষ্ণব্দৈপায়নরচিত বিচিত্র মহাভারতকথা বৈশম্পায়নের মুখে শুনেছি। তারপর বহু তীর্থে ভ্রমন করে সমন্তপঞ্চক দেশে যাই, যেখানে কুরু-পান্ডবের যুদ্ধ হয়েছিলো।


এখন আপনাদের দর্শন করতে এসেছি। দ্বিজগণ, আপনারা যজ্ঞে আহুতি, দিয়ে শুচি হয়ে সুখে উপবিষ্ট রয়েছেন, আমার কাছে কি শুনতে ইচ্ছা করেন আদেশ করুন- পবিত্র পুরানকথা, না মহাত্মা নরপতি ও ঋষিগন ইতিহাস? ঋষিরা বললেন, রাজা জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে বৈশ্মপায়ন যে ব্যাসরচিত মহাভারতকথা বলেছিলেন আমরা তাই শুনতে ইচ্ছে করি।


সৌতি বললেন, চরাচরগরে, হৃষীকেশ হরিকে নমস্কার করে আমি ব্যাসপোক্ত মহাভারতকথা আরম্ভ করছি। কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে বলে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরাও বলবেন। ব্যাসদেব এই।


(১) বিষ্ণুর অংশম্বরূপ দেবতা বা ঋষি বিশেষ। (২) অর্থাৎ পুরাণ-মহাভারতাদি বিজয়প্রদ আখ্যান পাঠ করবে। (৩) এর প্রকৃত নাম উগ্রশ্রবা জাতিতে সূত এজনা উপাধি সৌতি সৃতজাতির বৃত্তি সারথা ও পুরাণাদি কথন


মহাভারত সংক্ষেপে বলেছেন। আবার সবিস্তারেও বলেছেন। কোনও কোনও ব্রাম্মন এই গ্ৰন্থ আদি থেকে, কেউ আস্তীকের উপাখ্যান থেকে, কেউ বা উপরিচরের উপাখ্যান থেকে পাঠ করেন।


মহাভারত কে রচনা করেছিলেন?

মহাভারত রচনার আগে ব্যাসদেব ভেবেছিলেন, কোন উপায়ে এই ইতিহাস শিষ্যদের অধ্যয়ন করাবো? তখন ভগবান ব্রহ্মা তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন, তুমি গণেশকে স্মরণ কর, তিনি তোমার গ্রন্থের লিপিকার হবেন। ব্যাস গণেশকে অনুরোধ করলে তিনি বললেন, আমি সম্মত আছি, কিন্তু আমার লেখনী ক্ষণমাত্র থামবে না। ব্যাস ভাবলেন, আমার রচনায় আট হাজার আট শ এমন কূটশ্লোক আছে। যার অর্থ কেবল আমি আর আমার পুত্র শুক বুঝতে পারে, সঞ্জয় পারেন কিনা সন্দেহ। ব্যাসগণেশকে বললেন, আমি যা বলে যাব আপনি তার অর্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না। গণেশ বললেন, তাই হবে। গণেশ সর্বাজ্ঞ হলেও কূটশ্লোক লেখবার সময় তাঁকে ভাবতে হাত, সেই অবসরে ব্যাস অন্য বহূ শ্লোক রচনা করতেন।


মহাভারত কেন নাম হয়েছিলো? আদিপর্ব/মহাভারত

রাজা জনমেজয় এবং ব্রাম্মনগনের বহূ অনুরোধের পর ব্যাসদেব তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন। ভগবান ব্যাস এইে গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, ব্যাসদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। উপাখ্যান সহিত এই মহাভারতে লক্ষ শ্লোক আছে। উপাখ্যানভাগ বর্জন করে ব্যাস চব্বিশ হাজার শ্লোক এক সংহিতা রচনা করেছেন, পণ্ডিতগণের মতে তাই প্রকৃত মহাভারত।


তা ছাড়া ব্যাস দেড় শ শ্লোকে সমস্ত পর্বের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত অনুক্রমণিকা অধ্যায়ে দিয়েছেন। ব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শূকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনর লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধব'লোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। ব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন, আমি তাই বলব। পূর্বকালে দেবতারা তুলাদণ্ডে ওজন করে দেখেছিলেন যে উপনিষৎসহ চার বেদের তুলনায় একখানি এই গ্রন্থ মহত্ত্বে ও ভারবত্তায় অধিক, সেজনাই এর নাম মহাভারত। অনম্ভর সৌতি অতি সংক্ষেপে মহাভারতের মূল আখ্যান এবং পর্বসংগ্রহ (অর্থাৎ প্রত্যেক পর্বের বিষয়সমূহ) বর্ণনা করলেন।


বিঃদুঃ মহাভারতের সকল সংস্করনে এই আখ্যান নেই।


আমরা শৌনকের আশ্রমে সৌতি - আদিপর্ব/মহাভারত থেকে যা জানলাম?

কে রচনা করেছিলেন মহাভারত?

মহাভারতের রচনা করেছিলেন ব্যাসদেব এবং তা লিপিবদ্ধ করেছেন গনেশ। আমরা এই প্রথম পাতা থেকে এইটাই জানতে পারলাম।


মহাভারতের রচিয়তা কে?

মহাভারতের রচিয়তা হচ্ছেন গনেশ।


ব্যসদেব কার সহয়তা নিয়ে মহাভারত রচনা করেছিলেন?

ব্যসদেব গনেশের সহয়তা নিয়ে মহাভারত রচনা করেছিলেন।

মহাভারত কেন লিপিবদ্ধ করেছিলেন?

মহাভারত রচনার আগে ব্যাসদেব ভেবেছিলেন, কোন উপায়ে এই ইতিহাস শিষ্যদের অধ্যয়ন করাবো? তখন ভগবান ব্রহ্মা তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন, তুমি গণেশকে স্মরণ কর। আর গনেশের সহয়তাই মহাভারত লিপিবদ্ধ করেছিলেন ব্যাসদেব।


যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর আমাকে ছোট ভ্রাতা মনে করে ক্ষমা করে দিবেন। আর যেখানে যেখানে ভুল হয়ছে ভুল টা প্রমানাদী দিয়ে ধরিয়ে দিবেন। তাহলে আমি আমার লেখাটি পুনরুপ ভাবে লিখে দিব। সত্যকে জানুন আর সততার সাথে নিজেকে গড়ে তুলুন।

কৃষ্ণব্দৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত সারানুবাদ রাজশেখর বসু। বই থেকে সংগ্রহিত

নবীনতর পূর্বতন