রামায়ণ অযোদ্ধা কান্ড প্রথম খন্ড ২য় সর্গ ২য় পাতা। রামের অভিষেক
অযোদ্ধার রাজা ধশরথ দুন্দুভিসদৃশ গম্ভীর মধুর ও অদ্ভদ স্বরে চতুর্দ্দিক প্রতিদ্ধনিত করিয়া পরিষদ বর্গাকে আমন্ত্রন ও তাহাদিগের অভিনিবেশ আকার্ষন পূর্বক হিতকর ও প্রতীতিকর বাক্যে কহিলেন, পরিষদগন ! আমার পূর্ব পুরুষেরা এই বিস্তীর্ণ রাজ্য পুত্রনির্বিশেষে প্রতিপালন করিয়া আসিয়াছেন ইহা তোমরা অবস্যই জানো। এক্ষনে আমি সেই ইচ্ছাকু প্রভৃতি নৃপতি প্রাতিপালিত সুখোচিত সমস্ত সাম্রাজ্যে সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রস্তব করিতেছি।
দেখ আমি পুর্বতন নিয়ম অবলম্বন পুর্ব্বক আত্মাসুখ নিরপেক্ষ হইয়া প্রতিনিয়ত শক্ত্যনুসারে প্রজাগনের রক্ষনাবেক্ষন করিয়াছি। আমি সমস্ত লোকের হিতা চরণে দীক্ষিত হইয়া শ্বেত ছত্রের ছায়ায় এই শরীর জীর্ণ করিয়া ফেলিয়াছি। এক্ষুনে বহু সহসর আমার বয়ঃক্রম হইয়াছে, অতঃপর আমার ইচ্ছে এই যে, জীর্ণ দেহকে এক কালে বিশ্রাম দেই। আমি লোকের যে গুরুতর ধর্ম্মাতা বহন করিতেছি, নিরস্কশ মনুষ্য ইহার ত্রিসীমায় যাইতে পারে না। এবং ইহা বীর পুরুষেরই উপযুক্ত।
আমি এক্ষণে সে ভারে নিতান্ত পারিশ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি। অতএব এই সমস্ত সন্নিহিত ব্রাম্মনের অনুমতি গ্রহন পুর্বক পুত্রকে প্রজাগনের হিতসাধনে নিয়োগ করিয়া বিশ্রাম লাভের ইচ্ছে করি। আমার আত্মজ মহাবীর রাম আমারই সমস্ত গুন অধিকার করিয়া জন্ম গ্রহন করিয়াছেন। তিনি বলবীর্য্যে সুররাজ পুরন্দরেরই অনু-রুপ। এক্ষনে সেই পুষ্যাবিহারী চন্দ্রের ন্যায় প্রিয়দর্শন ধার্মিকর-প্রধান রামকে প্রীত মনে যৌবরাজ্যে নিয়োগ করিব।
তিনি তোমাদিগেরই যোগ্য, ত্রিলোক্য তাহাকে পাইয়া নাথবান হইবে। অতএব আমি অদ্যই বসুমতির এই হিতানুষ্ঠান করিব এবং রামের প্রতি সমস্ত সাম্রাজ্যভার অর্পণ করিয়া সুখী হইবো। এক্ষুনে বল আমার এই সাধু অভিপ্রায় তোমাদিগের অনুকুল হইবে কি না? অথবা যদি প্রীতিনিবন্ধন এই রুপ প্রস্তাব করিয়া থাকি, তবে এতদপেক্ষা হিতকর যাহা হইতে পারে, তোমরা তাহারও প্রসংগ কর। কারন মধ্যস্ত লোকের চিন্তা পূর্বাপার পক্ষ সঙ্ঘর্ষে অধিকতর ফলোপধায়ক হইয়া থাকে।
জলভারপুর্ণ জলধরকে দেখিয়া মহুর যেমন সন্তুষ্ট হয়, সেই রুপ ভুপালগন মহারাজ দশরথের বাক্য সন্তোষ সহকারে স্বীকার করেছিলেন। তখন রাজসভায় অগ্রে সামস্তগনের আনান্দ কোলা-হলে প্রতিদ্ধনি উদ্ধিত হইল। তৎপরে সাধারণের এ বিষয়ক আনান্দ যেন মেদিনী কম্পিত হইতে লাগিল।
অযোদ্ধার রাজা, ব্রাম্মন ও সেবাপতিগন পুরবাসী ও জানপদবর্গের সহিতধর্মর্থ কূশল মহীপাল দশরতের অভিপ্রায় অবগত হইয়া একমতে পরস্পর পরামর্শ করিতে লাগিলেন এবং ভুপালকৃত প্রশ্নের মীমাংসা করিয়া তাহাঁকে সম্বোধন পূর্বক কহিলেন, মহারাজ! আপনার বয়ঃক্রম বহু সহস্র বৎসর হইল। আপনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, এই কারণে শ্রেয় মহাবীর রাম একটি বৃহৎকায় মাতংগের পৃষ্ঠে ছত্রে মানন সংবৃত করিয়া গমন করিতেছেন, আমরা এইটি দেখিতেই ইচ্ছে করি।