মীরা বাঈয়ের ভক্তি ও প্রচার

মীরা বাঈ রাধা-কৃষ্ণ। মীরা বাঈয়ের ভক্তি ও প্রচার-মহাভারত।

"মীরা বাঈ" এই কথাটি ভক্তির জগতে সর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে। ভবিষ্যতেও ও ভক্তির জগতে থাকবে। "মীরা বাঈ" ছিলো ভগবান শ্রীকর্ষ্ণের সাধিকা। অন্য সাধকদের মত তন্ত্র মন্ত্র ভেলকি দিয়ে মুখে মুখে "মীরা বাঈ" কথাটি প্রচার করা হয়নি। ভগবান শ্রীকর্ষ্ণের পতি এতোটাই ভক্তি ছিলো যে এমনিতেই "মীরা বাঈ"কথাটি প্রচার হয়েছিলো সবার মাঝে।


আবার অনেকের মতে শুনা যায় যে "মীরা বাঈ" মীরা নাকি নেচে গেয়ে ভগবান গোবিন্দেকে পেয়েছিলো। কিন্তু আবার বৈষ্ণব রসিক ভক্তরা বলেন যে মীরা ভগবান কে অনেক আগেই পেয়েছিলো যে কারনে মীরা আনান্দে নেচে বেরিয়ে ছিলো।


"মীরা বাঈ" জীবন ছিলো পুরোটাই আশ্চার্য্যজনক। "মীরা বাঈ" তার দেহ মন এতোটাই পবিত্র ছিলো যে আর ভগবানের প্রতি এতোই ভক্তি থাকার কারনে মীরার শোশুরবাড়ি কেউ মারতে পারিনি। যতবারই চেষ্টা করেছিলো ততবার গোবিন্দ "মীরা বাঈ" কে বাচিয়েছিলো। যেমন সত্যযুগের প্রহ্লাদের ছোটবেলা ঘটনা। গোবিন্দ যতবার "মীরা বাঈ" কে রক্ষা করেছিলো ঠিক তত বেশি জয়-জয়কর দ্ধনি প্রচার হচ্ছিলো লোকমুখে।


একদিন মীরার অত্যাচারী দেওর তার বন্ধুকে রানাকে সাধু বানিয়ে মীরার কাছে পাঠিয়ে দিলো সব শিখিয়ে। মীরার দেওরের সেই সাধুবেশি ধ্রুত লোকটি মীরার কাছে গিয়ে বললো আমি একজন বৃন্দাবনে থাকা সাধু, আমাকে গিরিধারী পাঠিয়েছেন আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য। আপনি তো সর্বদায় বলেন গিরিধারীর সকল ইচ্ছে পুরণ করবেন। নিশ্চয় গিরিধারীর এই ইচ্ছেতেও আপনি পরিক্ষা দিতে প্রস্তুত বা সম্মতি দিবেন।


"মীরা বাঈ" ধ্রুত সাধুর কথা শুনে কিছুখন চুপ করে থেকে সাধুর কথায় শয্যা রেডী করতে লাগলো। ভগবান প্রান গোবিন্দের নাম জপতে জপতে। দূরে দাড়ীয়ে থাকা ছদ্যবেশী ধ্রুত সাধু দড়িয়ে মহাখুশিতে মনে মনে হাস্তে লাগলো। শয্য প্রস্তুত হলে "মীরা বাঈ" তাঁকে বসতে বললেন। কিন্তু ছদ্যবেশী ধ্রুত সাধু যেই না বসতে যাবে ঠিক তখনি তিনি শুনতে পেলেন "মীরা বাঈ" এর পবিত্র দেহ থেকে কৃষ্ণ নামের প্রতিধ্বনি।


প্রতিধ্বনিত কৃষ্ণ নাম শুনে "মীরা বাঈ" এর চরণের কাছে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে বলে , আমাকে ক্ষমা করো বলতে লাগলেন। আর এটাও বলতে লাগলেন যে অন্য সকল নারীর মত সাধারণ নারী ভেবেছিলাম। আর এখন আমি বুঝতে পারছি যে ছলনা করার চেষ্টা করাটা আমার ঠিক হয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি শুধু এসে ভুল করেছি আমার বন্ধু মানে আপনার দেওর রানা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে ছিলো এবং সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলো, আপনার পবিত্রাকে ও সতিত্তকে বলিদান নষ্ট করার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়েছে আমাকে নিজগুনে ক্ষমা করে দিন।


"মীরা বাঈ" রুপ ছিলো খুবই সুন্দর। "মীরা বাঈ" এর সাথে কারোরই তুলনা হতো না। "মীরা বাঈ" স্বামী মারা যাওয়ার ঘটনার পর "মীরা বাঈ" দেওর ভেবেছিলো এটাই তার কাছে দারুন সুযোগ। কোন রকম ভাবে যদি "মীরা বাঈ" কে যদি নিজের করে পাওয়া যায় তাহলে রানা তার নিজের বুকের আগুন নিভাবে। কিন্তু "মীরা বাঈ" যেখানে তার বামীকেই কখনো ধরা দেয়নি তাহলে কি করে অন্য কাউকে ধরা দিবে সেটা কিভাবে ভাবলো। অবশেসে যখন "মীরা বাঈ" কে কোনভাবেই বশে নিতে পারলো না তখন "মীরা বাঈ" মেরে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়ে গিয়েছিলো। আর একারনেই "মীরা বাঈ" দেওর তার বন্ধু রানা কে সাধু সাজিয়ে "মীরা বাঈ" কাছে পাঠিয়েছিলো।


"মীরা বাঈ" আজ থেকে পাচশত বছর আগে বৃন্দাবনের পথে পথে ঘুরে বেড়াতো। তখন কি কেউ মীরাকে আচড় কাটতে পেরেছিলো এক ফোটা, পারেন। বা অন্যকোন সাধু বা তন্ত্র মন্ত্র বা ভয় দেখীয়ে ও ভেলকী দেখিইয়ে "মীরা বাঈ" কথাটি প্রচার করা হয়নি। "মীরা বাঈ" ভগবান শ্রীকর্ষ্ণের পতি ভক্তি এতোটাই প্রবল ছিলো যে "মীরা বাঈ" কথাটি মানুষের মুখে মুখে প্রচার হয়ে গিয়েছিলো। কেননা "মীরা বাঈ" কেদে কেদে দিন রাতে এক মনে করে বৃন্দাবনের পথে পথে একা একা ঘুরে বেড়াত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজেকে সোপে দিয়ে। সব সময় কেদে কেদে গোবিন্দকে খুজে চলতো। "মীরা বাঈ"গোবিন্দকেও পেয়েও কাদত কেননা "মীরা বাঈ" গোবিন্দর জন্য ক্রন্দন করে অনেক বেশি আনান্দ পেতো। তাইত "মীরা বাঈ" হলো ভগবান প্রান গোবিন্দের যোগ্য সাধিকা। "মীরা বাঈ" মতো কেউ কোনদিন হতে পারবেনা।


শিক্ষাঃসর্বদা মন যদি ভগবানের নাম জপ করে তাহলে যতোবড়ই বিপদ আসুক না কেন ভগবান তাঁকে রক্ষা করেন।


আরো পড়ুন..........

রামায়ণ অযোদ্ধা কান্ড। প্রথম খন্ড/প্রথম সর্গ।

সৌনকের আশ্রমে সৌতি। আদিপর্ব/মহাভারত।

ধর্মিয় শিক্ষামুলক গল্প। মহাভারত
নবীনতর পূর্বতন