ধার্মিক রাজা ও এক জেলে। শিক্ষানীয় গল্প। মহাভারত।

ধার্মিক রাজা ও এক জেলে। শিক্ষানীয় গল্প। মহাভারত।

ধার্মিক রাজা ও এক জেলে। শিক্ষানীয় গল্প।  মহাভারত।

বছর আগে এক দেশে ছিলেন এক ধার্মিক রাজা। তার রাজ্যে কেউ কোন কষ্ট নিয়ে রাজার কাছে এলে তাঁকে ফিরিয়ে দেন না। তার উপযুক্ত যতটুকু পারেন সাহায্য করেন। একদিন রাজসভায় রানী উপস্থিত থাকা কালীন এক জেলে বড় একটা মাছ নিয়ে হাজির হলেন। এবং বললেন যাহাপনা একটু সাইজে মাছটি বড় হবার কারনে বাজারে কেউ কিনতে পারেনি। মাছটি যদি বিক্রি না করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবার আজ অনাহারে দিন কাটাবে। আপনি কিছু একটা করুন।


রাজা জেলের কথা শুনে ১০০টাকার মাছ ৫০০টাকা তে কিনে নিলেন আর ভাবলেন যাক জেলেকে আর কয়েক দিন মাছ ধরতে যেতে হবে না।জেলের একটু হলেও উপকার করতে পারলাম। কিন্তু এদিকে রাজার স্ত্রী রানী এসব দেখে রাজাকে ফিস ফিস করলে বললেন তুমি সামান্য ৫০ টাকার মাছ ৫০০টাকাতে নিয়ে নিলেন। আপনি জেলেকে ৫০ টাকার মাছ আর ৫০ টাকা বেশি দিয়ে উপকার করতেন। এক সংগে এতো টাকা দিলে তো কোষাগার ফাকা হয়ে যাবে।


রাজাও ভাবলেন ঠিকি তো এই জেলেকে একসংগে এতো টাকা না দিয়ে আরো কয়েক জনের কষ্ট দূর করা যেতো। এই ভাবে জেলেকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু কিভাবে টাকা ফেরত নিবেন। তা রাজা মশাই ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাই দেখে রানি আবার রাজাকে বললেন, আমি আপনাকে একটা বুদ্ধি দিবো, দেখবেন জেলে ঠিকি টাকা ফেরত দিয়ে মাছ টি নিয়ে যাবে। এই কথা শুনে রাজা রানিকে জিজ্ঞেস করলেন কি বুদ্ধি।


রানি তখন বললেন আমি এমন এক বুদ্ধি দিব আপনাকে যা প্রয়োগ করে আপনি আপনার টাকা ও ফেরত পাবেন আর আপনার কোন হানী হবে না। আপনি শুধু জেলে কে জিজ্ঞেস করবেন মাছটি পুরুষ নাকি স্ত্রী মাছ। যদি বলে পুরুষ মাছ তাহলে বলবেন স্ত্রী মাছ লাগবে আর যদি বলে স্ত্রী মাছ তাহলে বলবেন পুরুষ মাছ লাগবে । তখন জেলে আপনার কাছে মাছ টি চেয়ে নেবে, কেননা জেলে বলতে পারবেন না মাছটি পুরুষ নাকি স্ত্রী।


যেই বুদ্ধি সেই কাজ জেলে কে জিজ্ঞেস করলেন রাজা মাছটি কোন জাতের। স্ত্রী নাকি পুরুষ এই কথা শুনে জেলে থতমত খেয়ে জেলে রাজাকে বললেন মাছটি হিজরে মাছ। জেলে ভয়ে ভয়ে বলেছেন কেননা জেলে জানতেন না মাছটি স্ত্রী নাকি পুরুষ। আর তখনি সভায় থাকা লোকজন হাসাহাসি করতে লাগলেন। এবং রাজা তার বিচক্ষনতা দেখে আরো ৫০০ টাকা বকশিস দিলেন। জেলে যখন আরো ৫০০ টাকা পেলো খুশি হয়ে যেই না গেটের কাছে গেল অমনি ৫টাকার একটা নোট পরে গেলে জেলের থলি থেকে।


এবং সাথে সাথে কুড়ীয়ে নিয়ে জেলে টাকা খেতে লাগলো। আর এদিকে রানি তা দেখে আরো রেগে গেলো এবং রানী রাজাকে বললেন যাহাপনা এই জেলে তো খুবই লোভি ১০০০টাকা থেকে ৫টাকা পরে গেছে তা জেলে সেটা কুড়ীয়ে নিয়ে চুমু খাচ্ছে। গেটে কত গরিব মানুষ আসে তারা নাহয় কুড়িয়ে নিতো।


রাজামশায় জেলেকে আবার ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে তো ১০০০ টাকা দিয়েছি তা থেকে ৫টাকা নাহয় পরে গেছে, তা তুমি কুড়িয়ে নিয়ে চুমু খাচ্ছো কেন? ওই ৫টাকা না হয় আরো গরিব মানূষ যাওয়া আসে করে তারা কুড়িয়ে নিতো তাহলে তাদের একটু উপকার হতো। তোমাকে তো শাস্তি দেওয়া উচিত।


তখন জেলে উত্তরে বললেন যাহাপনা আমি লোভি না আমার এতো লোভ নেই। কিন্তু টাকার গায়ে আমার রাজা -রানীমার নাম লেখা আছে । গেটে তো কত লোক আসা যাওয়া করে কেউ যদি পা দিয়ে পিষে দেয় তাহলে কি আমার ভালো লাগবে যাহাপনা। এতে করে তো আমার রাজা আর রানীমার তো ইজ্জতের হানি হবে। তাই আমি টাকা টা কুড়িয়ে চুমু খাচ্ছিলাম আর কপালে ঠেকে প্রনাম করলাম। তাহলে আমি কেমন করে লোভি হলাম বলুন যাহাপনা।


রাজা মশায় জেলের কথা শুনে পুনরায় খুশি হয়ে আবারো ৫০০টাকা বকশিস দিলেন। সর্বমোট রাজা জেলেকে ১৫০০টাকা দিয়ে বিদায় করার পর চিন্তা করলেন? বউয়ের বুদ্ধি শুনে আজ তার ১৫০০ টাকা লোকাশান হলো। তখন রাজা তার রাজ্যে ঘোসনা করার জন্য একজন ঘোষকে বললেন তুমি সবাই কে বলে দিয়ো কেউ জেন বউয়ের বুদ্ধি না শুনে। শুনলে বউয়ের বুদ্ধিতে চললে এক টাকা হলেও লোকশান হয়।


আরো দেখুন.......

১। সৎসঙ্গ কি এবং কেন প্রয়োজন গল্প পড়ুন

২। কে মীরাবাঈ । রাধাকৃষ্ণ। মহাভারত

৩। শিক্ষানী গল্প মহাভারত

নবীনতর পূর্বতন