অগ্নির শাপ মোচন

মহর্ষি শৌনক সৌতিকে বললেন, আমি ভৃগবংসের বিবরণ শুনতে চাই, দয়া আমাকে বলুন?

সৌতি বললেন, রহ্না যখন বরুনের যজ্ঞ করছিলেন তখন সেই যজ্ঞ থেকে মহর্ষি ভৃগু জন্ম হয়েছিলো। ভৃগুর ভার্যার নাম পুলোমা। তিনি গর্ভবতী হলে একদিন ভৃগু স্নান করতে যান তখন এক রাক্ষস আশ্রুমে এসে ভৃগুপত্নীকে দেখে মুকধো হলো। এই রাক্ষাসের নাম পুলোমা। পুর্বে সে ভৃগুপত্নী পুলোমা কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু কন্যার পিতা ভৃগুকেই কন্যা সম্পাদন করেন।

সেই দুখ্য সর্বাদায় রাক্ষসের মনে ছিলো। ভৃগুর গৃহে অগ্নি প্রজলিত দেখে রাক্ষস বললো হে অগ্নি তুমি দেব গনের মুখ তুমি সত্য বলো এই পুলোমা কার ভার্যা। এই পুলোমাকে আমি পুর্বে আমার ভার্যা হিসেবে বরন করেছিলাম কিন্তু ভৃগু অন্যায় ভাবে পুলোমাকে গ্রহন করেছেন।

আমি পুলোমাকে হরণ করতে চাই!  তুমি সত্য বলো অগ্নি। 


অগ্নি ভীত হয়ে ধিরে ধিরে বললেন, তুমি পুর্বে পুলোমাকে বরণ করেছিলেন কিন্তু যথাবিধি নিয়ম মন্ত্র পাঠ করে গ্রহন করোনি। পুলোমার পিতা বর লাভের আশায় ভৃগুকে কন্যা সম্পাদন করেছেন। ভৃগু আমার সামনেই পুলোমাকে বিবাহ করেছেন। তুমি যাকে পুর্বে বরণ করেছিলেন এনিই পুলোমা। আমি মিথ্যে বলতে পারবো না।

তখন রাক্ষাস বরুনের রুপ ধারণ করে পুলোমাকে হরণ করে মহাবেগে নিয়ে চললো। পুলোমার গর্ভচ্যুত হলো এই জন্য তার নাম চ্যবন। সূর্য তুল্য সেই শিশুকে দেখে রাক্ষস ভয় পেলো এবং ভস্ম হয়ে ভুতলে পড়লো। পুলোমা  পুত্র কে নিয়ে দুখ্যিত মনে আশ্রমের দিকে এলো। ব্রহ্মা তার পুত্রবধুকে সান্তনা দিলেন। পুলোমার অশ্রুপাত নদির নাম দিলেন, বধুসরা। 

ভৃগু তার পত্নী পুলোমাকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার পরিচয় রাক্ষাস পেলো কোথায়? কে বলেছে? পুলোমা উত্তর দিলেন অগ্নি আমার পরিচয় দিয়েছিলেন।তখন ভৃগু অগ্নি কে অভিশাপ দিলেন। তুমি সর্ব ভক হবে।

তখন অগ্নিদেব জিজ্ঞেস করলেন ভৃগু কে তুমি কেন এমন অভিষাপ দিলেন? আমি ধর্মানুসারে রাক্ষাস কে সত্য বলেছি।  তুমি ব্রাহ্মণ,  তুমি মাননিয়, সেই জন্য আমি পত্যাভিশ্যাপ দিলাম না। আমি যগবলে বহু মুর্তিতে অধিষ্ঠান করি। আমাকে যগে আহুতি দেওয়া হয়, দেবগন ও পিতৃগন সন্তুষ্ট হন। অতঅএব আমি সর্বভুক কি করে হবো? 

অগ্নি ব্দিজগনের অগ্নিহোত্র ও যজ্ঞাদি ক্রিয়া থেকে অন্ত্ররনিহত হলেন। অগ্নির অভাবে সবাই কষ্ট পেতে শুর করলো। ঋষিরা চিন্তিত হয়ে  দেবগনের সংগে ব্রহ্মার কাছে গিয়ে শাপের বিষয়ে জানালেন  এবং বললেন অগ্নির অন্তর্ধানে আমাদের ক্রিয়াকলালে বিঘ্ন ঘটছে। যিনি যজ্ঞের অগ্রভাগ গ্রহন করেন এবং যিনি দেবতাদের মুখ তিনি কি করে সর্বভুক হতে পারেন। 

ব্রহ্মা তখন মিষ্টবাক্যে বললেন অগ্নিকে তুমি ত্রিলোকের ধরায়িতা তুমি ক্রিয়াকলাপের প্রবর্তক এরকম ক্রিয়ালোপ করা তোমার উচিত নয়। তুমি সদা পবিত্র, তুমি সর্বশরীর দিয়ে সর্বভুক হবেনা। তোমার গৃহদেশে যে শিখা আছে এবং তোমার যে মাংস ভোক্ষক শরীর আছে তাই সর্বভুক হবে।  

মহর্ষি ভৃগু যে অভিশাপ দিয়েছে তা সত্য করো।  এবং তোমার মুখে যে আহুতি দেওয়া হবে তা ভক্ষন করো। এবং দেবতাদের এবং তোমার ভাগ্য বলে মেনে নাও। অগ্নি তখন উত্তরে বললেন তাই হবে।  এই কথা শুনে সবাই নিজ নিজে গৃহে ফিরে গেলেন। আর এভাবেই অগ্নিদেবের শাপ মৌচন হয়েছিলো।

অগ্নির শাপ মোচন। পৌলোমপর্ব্ধায়। আদি পর্ব। মহাভারত। 
নবীনতর পূর্বতন