আয়োদ ধৌম্য ও শিষ্য উপমন্যু শিষ্য পরিক্ষা

আয়োদ ধৌম্য ও শিষ্য উপমন্যু শিষ্য পরিক্ষা

আয়োদ ধৌম্য ও শিষ্য উপমন্যু (পেইজ ৩) আদি পর্ব। মহাভারত।

আয়োদ ধৌম্য পাঞ্চাল দেশের শিষ্য আরুণির পরিক্ষা শেসে । আয়োদ ধৌম্য তার আর এক শিষ্য উপমন্যু কে আদেশ দিয়ে বললেন, তুমি আমার গো রক্ষা কর। উপমন্যু প্রত্যহ গো, চরিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে এসে গুরুকে প্রণাম করতে লাগলেন। একদিন গুরু, জিজ্ঞাসা করলেন, বৎস, তুমি কি খাও? তোমাকে বেশ সবল দেখছি। উপমন্যু বললেন, আমি ভিক্ষা করে জীবিকানির্বাহ করি। গুরু বললেন, আমাকে নিবেদন না করে ভিক্ষান্ন ভোজন উচিত নয়। তার পর থেকে উপমন্যু ভিক্ষান্তব্য এনে গরকে শুরু করলেন।


তথাপি তাঁকে পূষ্ট দেখে গুরু, বললেন, তুমি যা ভিক্ষা পাও সবই তো আমি নিই, তুমি এখন কি খাও? উপমন্যু বললেন, প্রথমবার ভিক্ষা করে যা পায় তা আপনাকে দিই, তারপর আবার ভিক্ষা করি, তাতেই আমার জীরিবানির্বাহ হয়। পরে বললেন, এ তোমার অন্যায়, এতে অন্য ভিক্ষাজীবীদের হানি হয়, তুমিও লোভী হয়ে পড়ছ। তারপর উপমন্যু একবার মাত্র ভিক্ষা করে গুরুকে দিতে লাগলেন। গুরু, আবার তাঁকে প্রশ্ন করলেন, বৎস, তোমাকে তো অতিশয় স্থলে দেখছি, এখন কি খাও? উপমন্যু বললেন, আমি এইসব গরুর দুধ খাই।


গুরু বললেন, আমার অনুমতি বিনা দুধ খাওয়া তোমার অন্যায়। তোমাকে তার পরেও স্থলেকায় রয়েছে দেখে গুরুকে, বললেন, এখন কি খাও? উপমন্যু - বললেন স্থন্যপানের পর বাচ্চারা যে ফেন উদ্গার করে তাই খাই। গুরু বললেন, এই বাছররা দয়া করে তোমার জন্য প্রচুর ফেন উদ্গার করে, তাতে এদের পুষ্টির ব্যাঘাত হয়: ফেন খাওয়াও তোমার উচিত নয়। গরুর সকল নিয়ম মেনে নিয়ে উপমন্যু গুরু চরাতে লাগলেন।


একদিন উপমন্যু ক্ষুধার্থ হয়ে অর্কপত্র(আকন্দপাতা),। সেই ক্ষার তিক্ত কটা রুক্ষ তীক্ষ্ণ বস্তু খেয়েে তিনি অন্ধ হলেন এবং চলতে চলতে কুপের মধ্যে পড়ে গেলেন। সূর্যাস্তের পর উপমন্যু ফিরে এলেন না দেখে আয়োদ ধৌম্য, বললেন, আমি তার সকল প্রকার ভোজনই নিষেধ করেছি, সে নিশ্চয় রাগ করেছে, তাকে খোঁজা উচিত। এই বলে তিনি শিষ্যদের সঙ্গে অরণ্যে গিয়ে ডাকলেন,উপমন্যু, কোথায় আছ, এস। উপমন্যু রূপের ভিতর থেকে উত্তর দিলেন, আমি আকন্দপত্র ভক্ষণের ফলে অন্ধ হয়ে এখানে পড়ে গেছি।


সৌমা বললেন, ভূমি সেনবদ্য অশ্বিনীকুমারদ্বয় স্তব কর, তাঁরা তোমাকে চক্ষুষ্মান করবেন। উপমন্যু স্তব করলেন। অশ্বিনীকুমার, তাঁর নিকট আবির্ভূত হয়ে বললেন, আমরা প্রীত হয়েছি, তুমি এই পুপ (পিষ্টক) ভক্ষণ করো। উপমন্যু বললেন, গুরুকে নিবেদন না করে আমি খেতে পারিনি। অশ্বিনীকুমারদ্বয় বললেন, তোমার উপাদ্ধায় ও পুর্বে আমাদের স্তব করে পুপ পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা গুরুকে নিবেদন না করেই খেয়েছিলেন। উপমন্যু বললেন, আমি আপনাদের নিকট অনুনয় করছি, গুরুকে নিবেদন না করে আমি খেতে পারবো না।


অশ্বিনীকুমারদ্বয় বললেন, তোমার গুরুভক্তি আমরা প্রীত হয়েছি; তোমার উপাদ্ধ্যয় দন্ত কৃষ্ণ লৌহময় হবে, হিরন্ময় হবে, তুমি চক্ষুস্মান হবে। এবং শ্রেয়োলাভ করবে। উপমন্যু চক্ষু লাভ করে গুরুর কাছে এলেন এবং অভিবাদন করে সকল বৃত্তান্ত জানালেন। গুরু প্রীত হয়ে বললেন, অশ্বিনীকুমারদ্বয় বরে তোমার মংগল হবে, সকল বেদ এবং ধর্মশাস্ত্রো তুমি আয়ত্ত করবে। উপমন্যুর পরিক্ষা এই রুপে শেস হলো।


আয়োদ ধৌম্য তার তৃতীয় শিষ্য বেদ আদেশ দিলেন, তুমি আমার গৃহ কিছুকাল বাস করে আমার সেবা করো, তোমার মঙল হবে। বেদ দীর্ঘকাল গৃহ কিছুকাল বাস করে আমার সেবা করো। তোমার এতে মঙল হবে। বেদ দীর্ঘকাল গুরুগৃহ থেকে তার আজ্ঞায় বলদের ন্যায় ভারবহন এবং শীত গ্রীষ্ম ক্ষুধা তৃষ্ণাদি কষ্ট সইতে লাগলেন। অবশেষে তিনি গুরুকে পরিতুষ্ট করে শ্রেয় ও সর্বজ্ঞতা লাভ করলেন। এই রুপে তাঁর পরীক্ষা শেস হলো।


আরো দেখুন.....

শৌনকের আশ্রমে সৌতি। আদিপর্ব। মহাভারত। পেইজ ১।

জনমেজয়ের শাপ। আদিপর্ব।মহাভারত। পেইজ ২।

أحدث أقدم